যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডিত সাবেক এমপি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার মারা গেছেন
মঠবাড়িয়া সংবাদদাতা >>
পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু দÐিত আসামী আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার (৯২) পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার ভোরে তিনি ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান। তার পারিবারিক সূত্র মৃত্যুর বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বেশ কয়েকবছর ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত অবস্থায় আমেরিকায় তার বড় মেয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।
জানাগেছে, ১৯৭১ সালে আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার মঠবাড়িয়ায় পিস কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে বিশাল এক রাজাকাকার বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় গণহত্যা,ধর্ষণ, লুটপাট চালানোর অভিযোগে ২০১৪ সালে দায়ের হওয়া যুদ্ধাপরাধের মামলায় তিনি আমৃত্যু দÐিত হন। ওই মামলা দায়েরের আগেই তিনি দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পালিয়ে যান। গত দশ বছর ধরে তিনি আমেরিকায় পলাতক অবস্থায় ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধেও সময় মঠবাড়িয়ায় ৩৬জন মুক্তিকামী মানুয়ের ওপর গণহত্যা, ৫৫৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করাসহ ৫টি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি সেক্টর কমান্ডারস ঘোষিত ৫০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় জব্বার ইঞ্জিনিয়ার এর নাম রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ৭৫ সালে তার রাজনৈতিক কর্মকাÐ শুরু হলেও এরশাদ আমলে মূলত তার রাজনৈতিক আবির্ভাব ঘটে। এরপর তিনি এরশাদের আস্থাভাজন হিসেবে জাতীয় পার্টি(এরশাদ)কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতিও নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পিরোজপুর-৩ আসনে তিনবার সংসদ নির্বাচিত হন। দুইবার এরশাদ সরকার ও একবার বিএনপির আমলে তিনি এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া পিরোজপুর জেলা চেয়ারম্যান হিসেবে একবার দায়িত্ব পালন করেন।
জানা গেছে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় শান্তি কমিটির (পিচ কমিটি অব পাকিস্তান) চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ইসকান্দার মৃধার নেতৃত্বে একদল রাজাকার বাহিনী দু’টি গণহত্যাসহ ৮ মেধাবী ছাত্র হত্যা, হিন্দু বাড়ীতে লুটপাট, নারী নির্যাতন ও অগ্নি সংযোগ করে। জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে স্থানীয় রাজাকার বাহিনী নেতৃত্বে ৬০/৬৫ জনের একটি রাজাকার বাহিনী ৭১’এর ৬ অক্টোবর রাত ১১ টার দিকে উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামে তাদের বাড়িতে হানা দেয়। এসময় তরা ৩০জনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর ৩০জনকে সূর্যমণি বেড়ি বাঁধের পাড়ে নিয়ে গুলি করে রাজাকার বাহিনী। সেদিন ২৪জন শহীদ হন। এ গণহত্যার দায়ে ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজাকার জব্বার ইঞ্জিনিয়ারসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই সময়ে সূর্যমণিতে রাজাকারদের গুলি খেয়ে বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত জ্ঞানেন্দ্র মিত্র (৬২) বাদী হয়ে মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মামলায় জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামী করে সাত জনের নামে মামলা করা হয়। এছাড়া মামলায় আরও ৬০/৬৫ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়। ওই বছর বছর ২১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুানালে মামলা স্থানান্তরিত হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধি পাঁচ ধরনের অভিযোগে ২০১৪ সালের ১ মে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। ১২ মে জব্বারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তবে এর আগে ২০১০ সালে তিনি গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আমেরিকায় আত্মগোপন করেন।
২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি বিচারপতি এনায়েতুর রহীম এর নেতৃত্বাধিন গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালতে পলাতক যুদ্ধাপরাধি আব্দুল জব্বারের আমৃত্যু কারাদÐাদেশ দেওয়া হয়।