স্ত্রীকে হত্যা করে হাসপাতালে লাশ রেখে পালাল স্বামী!
বদরগঞ্জে নেশার টাকা না পেয়ে মাধবী রানী দাস (২০) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ হাসপাতালে রেখে স্বামী খোকন কুমার দাস পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় খোকন কুমার দাসসহ সাতজনের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার।
পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার পৌর শহরের নেহারস্কুলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের কলেজপাড়া এলাকার মানিক দাসের মেয়ে মাধবী রানীর সঙ্গে প্রায় ৪ বছর আগে বদরগঞ্জ পৌর শহরের নেহারস্কুলপাড়া এলাকার খিতিশ চন্দ্র দাসের ছেলে খোকন কুমার দাসের বিয়ে হয়।
বিয়ের কিছুদিন ভালোভাবেই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। সংসারে তাদের তিন বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
এর মধ্যে খোকন কুমার দাস মাদকাসক্ত হয়ে স্ত্রীকে অকারণে প্রায় সময় মারধর করা শুরু করেন।
মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় গত এক মাস আগে মাধবীর মা ভারতী রানী বদরগঞ্জ থানায় জামাতা খোকনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
ভবিষ্যতে আর কোনোদিন স্ত্রীকে নির্যাতন না করার শর্তে ক্ষমা চান খোকন। পরে পুলিশ বিষয়টি আপস করে দেয়।
এর মধ্যে মাধবী রানী আবার তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। মেয়ের সুখের কারণে মাধবীর বাবা মানিক চন্দ্র দাস মেয়েকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেন। যাতে স্বামী-স্ত্রীর রোজগারে তাদের সংসার ভালোভাবে চলে। কিন্তু দিন দিন খোকন কুমার দাস বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্ত্রী মাধবীর কাছে নেশা করার জন্য টাকা চান খোকন। মাধবী টাকা দিতে অপারগতা জানান। একপর্যায়ে টাকা না পেয়ে মাধবীকে নিজ ঘরে নিয়ে বেদম মারপিট শুরু করেন খোকন। নির্যাতন সইতে না পেরে খোকনের পা ধরে অনুনয়-বিনয় করেও রক্ষা হয়নি মাধবীর।
একপর্যায়ে শ্বাসরোধ করে মাধবীকে হত্যা করেন খোকন। পরে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য মৃত অবস্থায় মাধবীকে ও আধাঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যান খোকন।
এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসককে তিনি জানান, আমার স্ত্রী ক্ষোভে ফাঁস দিয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে এসেছি। এ কথা বলে হাসপাতালের বিছানায় রেখে খোকন পালিয়ে যান।
পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে এখন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে খোকন ও তার পরিবারের লোকজন।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মুস্তারিন জাহান মাওলা বলেন, স্ত্রী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যাচেষ্টার কথা বলে হাসপাতালের বিছানায় রেখে খোকন পালিয়ে যান। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায় হাসপাতালে আনার অনেক আগেই মাধবী রানী মারা গেছেন। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হলে তারা এসে লাশ নিয়ে যায়।
ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।