সন্ধ্যা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে কাউখালীর সোনাকুর গ্রাম।

Sharing is caring!

সন্ধ্যা নদীর বিরামহীন ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কাউখালী উপজেলার পশ্চিম তীরের সোনাকুর গ্রাম। প্রতি মুহূর্তে কোনো না কোনো অংশ বিলীন হচ্ছে সন্ধ্যার গহ্বরে। গত ১৫ দিনে সোনাকুর গ্রামের প্রায় ২০ বিঘা জমি, ৫০টি ঘরবাড়ি, ২০টি দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কেবল সোনাকুরই নয় দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম তীরের সয়না, রঘুনাথপুর, রোঙ্গাকাঠী ও গন্ধর্ব এলাকার বিস্তীর্ণ জনপথ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ২৫-৩০ বছর ধরে পশ্চিম তীরের সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে মানচিত্র পরিবর্তন হলেও ভাঙন রোধে নেই কোনো পদক্ষেপ। এ নিয়ে গত শনিবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কাউখালী-ঢাকাস্থ কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়।

কাউখালী উপজেলার মাঝ খান থেকে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ের একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদের নাম সোনাকুর। একসময় সোনাকুরের পাল সমপ্রদায়ের আবাস ভূমি যা ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প পল্লী হিসেবে পরিচিত ছিল। ঐতিহ্যবাহী সে মৃৎশিল্প পল্লী আজ কেবলই স্মৃতি।

দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনের ফলে সোনাকুর গ্রামের ৫০ ভাগ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এক সময়ে সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ের ওই গ্রামটিতে তৈরি হতো মাটির হাড়ি-পাতিল, বাসন কোষনসহ পরিবারের ব্যবহার্য তৈজসপত্র, ঘরের চালায় দেওয়ার জন্য টালি, ফুলের টব। শুধু পিরোজপুর জেলাই নয় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনের মাটির তৈরি যাবতীয় তৈজসপত্র সরবরাহ করত ওই পল্লীর মানুষ। কর্মব্যস্ত ওই গ্রামের মানুষ একসময় অর্থ বৈভবের মালিক ছিল। গ্রামটির সকল ঐতিহ্য সন্ধ্যা নদীর অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে শত শত পরিবার আজ পথে বসেছে। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। শেওলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামে। অনেকে পাড়ি জমিয়েছে শহরে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছে কোনো না কোনো বস্তিতে। যারা এলাকা ছাড়তে পারেনি তারা কোনো প্রকার সহায়তা না পেয়ে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আবাসনে, প্রতিবেশীর আঙিনায় বা কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে। নিরুপায় কর্মক্ষম ওই পল্লীর বাসিন্দাদের অনেকেই ভিক্ষা করে দিন পার করছেন।

ভাঙন কবলিত এলাকার ইন্দ্র কুন্ডু, শংকর পাল, বিনয় পাল, কালু শেখ, হেমায়েত আকন, মনির চৌকিদার বলেন, এক সময় তাদের সব কিছু ছিল আজ তারা অসহায়। তারা বেঁচে আছে মানুষের দয়ায়। সন্ধ্যার পাড়ের ইন্দ্র কুন্ডু তার জমির উপর গাছের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘সামনে দুই বিঘা জমি ছিল, তা রাক্ষুসে নদীতে লইয়া গেছে। প্রমত্তা সন্ধ্যা কেড়ে নিয়েছে আমড়াজুরি ইউনিয়নের সোনাকুর গ্রামের অর্ধেকাংশ, ঘরবাড়ি, দোকানঘরসহ ফসলি ভূমি। বর্তমানে ভাঙনে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অতুল পাল, জয়দেব পাল, শ্যামল পাল, অমল পাল, সঞ্চীব পালন সহ অর্ধশতাধিক পরিবার। ওই এলাকার রাখাল পাল বলেন সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃত শিল্প এখন বিলীন হওয়ার পথে। এই এলাকার ভাঙন এতই তীব্র, পানির অস্থির চলাচল চরম ভীতির সৃষ্টি করেছে। ওই এলাকা থেকো নৌচলাচলও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

YouTube
error: Content is protected !!