আজ ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১১ বছর ।। বলেশ্বর নদ তীরের ক্ষত শুকায়নি আজও
রফিকুজ্জামান আবীর : >
আজ ১৫ নভেম্বর ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডর দিবস। ২০০৭ সালের এই দিনের ভয়াল রাতে উপকূলীয় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিডরে বলেশ^র নদ তীরবর্তী সাপলেজা ইউনিয়নের ক্ষেতাছিড়া বেড়িবাঁধ ধসে মঠবাড়িয়ায় বিপর্যয় নেমে আসে। ১৭১জন মানুষের প্রাণহাণীসহ প্রায় ২০ হাজারের অধিক মানুষ আহত হন। কয়েকহাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্তসহ গাছপালা উপড়ে মহাবিপর্যয় ঘটেছিল এ জনপদে। দুর্যোগ কবলিত মঠবাড়িয়া টানা দুই বছরে দুর্গত অবস্থা কেটে উঠলেও সিডরের উৎসমুখ বশে^র নদীর ক্ষেতাছিড়া মোহনার বাঁধও আজও বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এখনও অস্বাভাবিক জোয়ারের জোয়ারের প্লাবনে ক্ষেতাছিড়া জেলে পল্লীতে চলছে দুর্ভোগের কাল।
ক্ষেতাছিড়া গ্রামের সিডরে স্বজন হারা জেলে খলিল শরীফ জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের ভয়াল রাতে ক্ষেতাছিড়া গ্রামের বলেশ^র নদ মোহনায় প্রথম জলোচ্ছ¡াস আঘাত হানে। মুহূর্তেই বেড়িবাঁধ বাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নেয় পুরো গ্রাম। ভয়ালতার রাতে তার পরিবারের ৭জন জন সদস্যসহ পুরো গ্রামে ৫৪জন মানুষের প্রাণহানী ঘটে। সেই রাতে জেলে খলিল শরীফ গাছ আকড়ে বেঁচে থাকলেও তার পরিবারের ৭ সদস্য নিহত হন। বৃদ্ধা মা আলেয়া বেগম, স্ত্রী রওশন আরা, মেয়ে কারিমা, তিন নাতি সোনিয়া(৮) ও সিদ্দিক(৫), মিরাজ(৩) ও ভাই জলিল শরীফের স্ত্রী তাছলিমা বেগম নিহত হন। নিহতদের ক্ষেতাছিড়া বেড়িবাঁধের পাড়ে গণকবর দেওয়া হয়।
বলেশ^র নদ তীরের সিডরের উৎসমুখ ক্ষেতাছিড়া গ্রাম পরিদর্শন করে দেখাগেছে, সিডরের জ্বলোচ্ছাসের ক্ষত নিয়ে বিধ্বস্ত কোন মতে টিকে আছে বাঁধ। বাবুরহাট থেকে ক্ষেতাছিড়া হয়ে কচুবাড়িয়া পর্যন্ত নদী তীরের প্রায় চার কিলোমিটার বাঁধ এখনও যথাযথভাবে সংস্কার হয়নি। ক্ষেতাছিড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে হাজিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার বিপর্যস্ত সড়কটি আজও পাকা হয়নি। জেলে অধ্যুষিত এ গ্রামের মানুষের বাঁধ ধসের আতংক আজও কাটেনি।
ক্ষেতাছিড়া গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন বলেন, বাবুর হাট থেকে ক্ষেতাছিড়া বাঁধের সাড়ে তিন কিলোমিটারে বিধ্বস্ত বাঁধের বাইরে এখনও ৪৫০ জেলে পরিবারের বসতি ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) সূত্রে জানাগেছে, মঠবাড়িয়ার ক্ষেতাছিড়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ১৮০০ মিটার বøক নির্মাণের কাজ চলছে। বেড়িবাঁধের পাড়ের বসতি সরিয়ে না নেয়ায় আপাতত বাঁধে মাটি ভরাটের কাজ থমকে আছে । কাজটি সম্পন্ন হলে জ্বলোচ্ছাসের কবল হতে ক্ষোতাছিড়ার মানুষ রক্ষা পাবে।